২০ বছর বয়সী তরুণ রাকিব হাসান। ২০১৮ সালে এসএসসি পাস ক’রেছে। বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করেন। তাই সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তাদের বাসার বাইরে থাকতে হয়। রাকিব স্কুল-কলেজে যাওয়া ছাড়া বাকি স’ময়টুকু বাসায় কাটাতো।
ছোটবেলা থেকেই ক’ম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা তার শখ। সুযোগ পেলেই ক’ম্পিউটার নিয়ে বসে থাকে। নিত্যনতুন কিছু জানা বা শে’খার প্রতি তার ঝোঁ’কটা বেশি।
এসএসসি প’রীক্ষা দেয়ার পর রাকিব কয়েক মাস লেখাপড়া থেকে দূরে ছিল। তাই এই পুরো সময়টা কম্পিউটারে কাটাতো। তখন সা’মাজিক যো’গাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) একটি আইডি খোলে।
কয়েক মাসের ভেতরে তার বন্ধুর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ফে’সবুকের মাধ্যমে ক’য়েকজনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের একজন ছিল ইয়াছিন। মে’সেঞ্জারে প্রায়ই ইয়াছিনের সঙ্গে রাকিবের কথা হতো।
ইয়াছিন বিভিন্ন বয়সী না’রীদের নুড ছবি ও ভিডিও রাকিবকে শেয়ার করতো। এসব ছবি ও ভিডিও দেখে আগ্রহ বাড়ে রাকিবের। ইয়াছিন কী’ভাবে এগুলো সংগ্রহ করে এ নিয়ে রাকিবের কৌ’তূহলের শেষ নাই।
একপর্যায়ে ইয়াছিন নিজেই জানায় যে, বিভিন্ন না’রীদের ফেসবুক আইডি হ্যা’ক করে তাদের মেসেঞ্জার থেকে এগুলো সংগ্রহ করে। এরপর রাকিবও বন্ধু ইয়াছিনের কাছ থেকে আইডি হ্যা’কের কৌ’শল আ’য়ত্ত করে নেয়।
তারপর পরবর্তী আড়াই বছরে রাকিব ক’য়েক হাজার তরুণীর আইডি হ্যা’ক করে সংগ্রহ করেছে নগ্ন ছবি ও ভিডিও। এসব ছবি দিয়ে ব্ল্যা’কমেইল করে লাখ লাখ টাকা হা’তিয়ে নিয়েছে রাকিব। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি।
এক তরুণীর করা অ’ভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম ই’নভেস্টিগেশন টিম।তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইয়াছিনের কাছ থেকে আইডি হ্যা’কের কৌশল আয়ত্ত করে সফল হয় রাকিব।
দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় রাকিব ফেসবুকে কাটাতো। এভাবে প্রতিদিনই একের পর এক আইডি হ্যা’ক করতো। আইডি হ্যা’কের জন্য সে ফিশিং লিংক তৈরি করতো। লুডু খেলা বা ক্রিকেট-ফুটবল খেলা, বিভিন্ন প্র’তিযোগিতার প্রার্থী হিসেবে ভোট চাওয়া, লটারি জেতার মতো আ’কর্ষণীয় সব ফিশিং লিংক তৈরি করতো।
তারপর পরিচিত-অ’পরিচিত বন্ধুদের মেসেঞ্জারে এসব লিংক পাঠাতো। কারও কাছে রাকিব বলতো সে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। ওই লিংকে ঢুকে তাকে একটি ভোট দেয়ার অনুরোধ জানাতো। আবার কাউকে লুডু লেখার আ’মন্ত্রণ জানাতো।
কিন্তু যাদেরকে পাঠাতো তাদের এই লিংকে ঢুকতে হলে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিতে হতো। যারা এই ভুলটি করতো তাদের আইডি চলে যেতো রাকিবের নি’য়ন্ত্রণে। পরে এসব আইডির মেসেঞ্জারে ঢুকে সব ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও নিজের কাছে নিতো রাকিব। পরে এসব ভিডিও যার আইডি হ্যাক করেছে তার স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা চাইতো। এভাবে অ’নেকেই তাকে টাকা দিয়ে বুঝ দিতেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হ্যাক করা আইডি খুলে রাকিব খুঁজে বের করতো এসব তরুণীরা কার কার সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করেছেন। তারপর সেগুলো তার ক’ম্পিউটারে ফাইল করে রাখতো। তার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ছবি ও ভিডিও। মূলত সে নিজেই এসব দেখে আনন্দ পেতো। পাশাপাশি হা’তিয়ার হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করতো। অন্তত অর্ধশতাধিক নারীকে ব্ল্যা’কমেইল করে রাকিব প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। রাকিবের প্র’তারণার শিকার হয়ে অনেক নারী থানায় অভিযোগ করেন। সুত্র: মানবজমিন